নিজস্ব প্রতিবেদক •
সাপ্তাহিক ছুটির সাথে দুর্গাপুজার বন্ধ যুক্ত হয়ে প্রায় টানা ৪দিনের ছুটির মুখে পড়েছে সরকারি অফিস-আদালত। আর এরই সুযোগে অবকাশ যাপনের জন্য দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ছুটে আসছেন হাজার হাজার কর্মব্যস্ত মানুষ। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির মাঝেও পর্যটকদের ভীড়ে জমজমাট হয়ে ওঠেছে কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্র, রাস্তাঘাট ও বিপণী কেন্দ্রগুলো।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, গত দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটির পর আজ রোববার অফিস-আদালতে খোলার দিন হলেও কাল সোমবার দুর্গাপুজার দশমী বা বিসর্জন অনুষ্ঠান উপলক্ষে আবারো সরকারী ছুটি। তাই টানা প্রায় ৪ দিনের ছুটির সুযোগে হাজার হাজার কর্মব্যস্ত মানুষ এখন অবকাশ যাপনের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারে ছুটে আসছেন। ইতোমধ্যে পর্যটকদের ভীড়ে স্থানীয়রা যানবাহন সংকটে পড়েছে। গণপরিবহণগুলো পর্যটকদের ‘রিজার্ভ’ ভাড়া ধরতে গিয়ে স্থানীয়দের এড়িয়ে যাচ্ছে। তবে সোমবার দুর্গাপুজার বিসর্জনের পর মঙ্গলবার থেকে কক্সবাজারে পর্যটকদের চাপ কিছুটা কমলেও বৃহস্পতিবার থেকে আবারো বাড়বে বলে মনে করছেন হোটেল মালিকরা।
হোটেল মালিকদের সংগঠন ‘ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশ, কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন ঘরবন্দী থাকা মানুষগুলো এখন যেন মুক্ত হাওয়ার সন্ধানে, বুক ভরে নি:শ্বাস নিতে কক্সবাজার সাগরপাড়ের দিকে ছুটছে। বিশেষ করে দুর্গাপুজার বন্ধের সাথে সাপ্তাহিক ছুটি প্রায় যুক্ত হওয়ায় লকডউনের পর এবার রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। তবে এখন একটি কক্ষে গাদাগাদি করে অতিরিক্ত পর্যটক থাকার সুযোগ নেই।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাপল বেড ও টুইন বেডে সর্বোচ্চ ২ জন অবস্থান করতে পারছেন। সে হিসেবে কক্সবাজার শহর ও শহরতলীর চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে একদিনে সর্বোচ্চ ৮২ হাজার পর্যটক রাত যাপন করতে পারবেন, করোনার আগে এই সক্ষমতা ছিল দ্বিগুণ।
তিনি বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে ছুটির দিনে কক্সবাজারের হোটেলগুলোর প্রায় ৮০% ভাগ কক্ষ ভাড়া হয়ে যাচ্ছে। আর গত ২দিন ধরে প্রায় শতভাগ কক্ষ ভাড়া হয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান এমএ হাসিব বাদল বলেন, কয়েকদিনের বৈরী আবহাওয়া সত্বেও কক্সবাজারে এখন লাখো পর্যটক অবস্থান করছেন। শীত যতই ঘনিয়ে আসবে, কক্সবাজারে পর্যটকও ততই বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
শনিবার সকালে ও বিকালে সরেজমিন পরিদর্শনকালে কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ২ কি.মি সমুদ্র সৈকত জুড়ে নানা বর্ণের ও বয়সের হাজার হাজার পর্যটক দেখা যায়। কেউ উত্তাল ঢেউয়ের সাথে জলকেলিতে মাতছেন, কেউবা সমুদ্রবাইকে চড়ছেন, কেউ কেউ চেয়ারে বা সৈকতের বালিতে বসে আড্ডা দিচ্ছেন, আর কেউবা সৈকতের প্রাকৃতিক পথ ধরে মাইলের পর মাইল হেঁটে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। এসব পর্যটকের ভীড়ে শনিবার বিকালে কলাতলী সৈকতে কথা হয় পর্যটক আজিজ আহমদ ও কাকলী আহমদ দম্পতির সাথে। টানা সরকারী ছুটিতে শুক্রবার সকালে তারা কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। থাকবেন সোমবার পর্যন্ত। লকডাউনে দীর্ঘদিন ঘরে বন্দীজীবন কাটিয়ে একটু বুকভরে সতেজ নি:শ্বাস নেয়ার জন্য ৩ দিনের ছুটি নিয়ে কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন। একইদিন বেড়াতে আসা সিলেটের রাজিয়া ও কবীর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখে বিমোহিত বলে জানান।
শনিবার রাতে তারা বলেন, জীবনে প্রথম এসেছি। আবার পেয়েছি জ্যোৎস্না রাতও। তাই জীবনে এমন সময় কখনও ভুলব না।
উল্লেখ্য, করোনা সতর্কতায় গত ১৮ মার্চ থেকে সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীকে কক্সবাজার জেলাকে লকডাউন, শহরকে রেডজোন ঘোষণা করে সকল ধরনের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ সাড়ে ৩ মাস পর গত ১ জুলাই থেকে লকডাউন শিথীল করে কক্সবাজার শহরের দোকানপাট খুলে দেওয়া হলেও পর্যটন কেন্দ্রগুলো সীমিত পরিসরে চালুর অনুমতি দেয়া হয় গত ১৭ আগস্ট থেকে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, মহামারী করোনা এখনও দূর হয়ে যায়নি। তবুও পর্যটকদের জন্য সীমিত পরিসরে কক্সবাজার পৌরসভার দর্শনীয় স্থানসমূহ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর শিথিলতা বা কঠোরতা ভবিষ্যৎ করোনা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে বলে তিনি জানান।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-